“কন আর্টিস্ট”

“কন আর্টিস্ট” নামটার সাথে
আমরা অনেকেই কম বেশী
পরিচিত। সোজা বাংলায়
বললে প্রতারক। হলিউডের
সিনেমা “Ocean Eleven”
কিংবা বলিউডের “ধুম”
দেখে কি কেও কখনো
চিন্তা করেছেন বাস্তবে এই
রকম ঘটনা ঘটেছে কিনা।
সম্ভবত কেও চিন্তাও করেননি
বাস্তব জীবনেও রয়েছেন এমন
কিছু মানুষ আর তাদের
কুকীর্তি সিনেমাকেও
ছাড়িয়ে যায়। আসুন পরিচিত
হয় “কন আর্টিস্ট” দের দুনিয়ার
কিছু রথী মহারথীদের সাথে।
শুরুতেই যার নাম আসবে তিনি
হলেন জর্জ ম্যাকগ্রেগর।
জাতিতে স্কটিশ এই লোকের
জন্ম ২৪ ডিসেম্বর ১৭৮৬। ১৬ বছর
বয়সেই যোগ দেন ব্রিটিশ
সেনাবাহিনীতে । দ্রুত
পদোন্নতি ও হয়। কিন্তু উচ্চপদস্ত
কিছু কর্মকর্তার সাথে
বিরোধে জড়িয়ে বেরিয়ে
আসেন সেনাবাহিনী
থেকে। ততদিনে সাউথ
আমেরিকার স্বাধীনতার
আন্দোলনের অনেক খবর জেনে
গেছেন। ইয়োরোপীয় দখলদার
থেকে মুক্তির জন্য লড়ছে
সাউথ আমেরিকানরা। তিনি
ও সুযোগের সন্ধানে পাড়ি
দিলেন সেখানে। তারপর
কখনো এই পক্ষ, কখনো ওই পক্ষের
হয়ে লড়াই করে, সাত ঘাটের
পানি খেয়ে ব্রিটেনে
ফিরে আসেন ১৮২০ সালে।
ফিরেই ঘোষণা করেন তিনি
এখন “পয়েস” নামক এক দেশের
মালিক যা তিনি পেয়েছেন
স্থানীয় এক রাজার থেকে।
প্রচুর সম্পদে পরিপূর্ণ এই
জায়গায় এখন প্রয়োজন শুদু
ইউরোপিয়ানদের বিনিয়োগ।
সেই সময় স্প্যানিশদের
আধিপত্যের কারনে সাউথ
আমেরিকায় ব্রিটিশ বনিকরা
বিশেষ সুবিধা করতে পারতো
না। সুতরাং তারা কেও এই
সুযোগ হাতছাড়া করতে
চাইলো না। জর্জ ম্যাকগ্রেগর
রীতিমতো “পয়েস” এর
দূতাবাস খুলে শেয়ার বেচা
শুরু করেন। এমনকি “পয়েস” এর
অবস্তান দেখাতে একটি ম্যাপ
ও তৈরি করেন। ২ বছরের ভিতর
২,০০,০০০ পাউন্ড জোগাড় করে
ফেলেন। পরবর্তীতে শেয়ার
এর লাভের বদলে তিনি
বিনিয়োগকারীদের “পয়েস”
এর জমি দিতে চান। শুরুতে
অনেকেই রাজি না হলেও
শেষ পর্যন্ত দুই জাহাজ ভর্তি
সেটেলাররা রওনা হয় “পয়েস”
এর উদ্দেশে। বুজতেই পারছেন
“পয়েস” নামক দেশের চিহ্ন ও
তারা খুজে পায়নি।
ইউরোপের অনেক দেশে এই
একি প্রতারনা করে
পরবর্তীতে ভেনেজুএলায়
পালিয়ে যান এবং
সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বিতীয় যার নাম আসবে
তিনি হলেন ভিক্তর লাস্তিগ।
হাঙ্গেরিয়ান এই ভদ্রলোক
বিখ্যাত তার বিভিন্ন স্কিম
এর জন্য। তিনি এমন কি
শিকাগোর গডফাদার আল
কাপন কেও বোকা
বানিয়েছেন। তবে তিনি
বিখ্যাত হয়েছেন কারন
তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি
পারিসের আইফেল টাওয়ার
বিক্রি করেছেন। তাও একবার
নয়, দুই দুইবার। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের
পরে প্যারিস তখন ঘুরে
দাঁড়িয়েছে। নতুন নতুন
স্তাপনা তৈরি হচ্ছে। কন
আর্টিস্টদের জন্য সেটা ছিল
সুসময়। লাস্তিগ ভুয়া সরকারি
পরিচয়পত্র দেখিয়ে কিছু
লোহার ব্যবসায়ীর সাথে
মীটিং করলেন। তাদের
জানালেন সরকার আইফেল
টাওয়ার বিক্রি করবে কারন
তা শহরের অন্যান্য স্থাপনার
সাথে মিলে না। শুরুতে
আসলেই পরিকল্পনা ছিল
আইফেল টাওয়ার সরিয়ে
ফেলা হবে। লাস্তিগ সেই
পরিকল্পনার সুযোগটাই
নিলেন। দুইজন ব্যবসায়ী রাজি
ও হয়ে গেলেন। লাস্তিগ
তাদের বিক্রির খবরটা গোপন
রাখতে বললেন চুক্তি না
হওয়া পর্যন্ত। এমনকি তাদের
ঘুরিয়ে আনলেন লিমজিনে
করে। চুক্তি শেষ হওয়ার পর
বুজতেই পারছেন টাকা নিয়ে
চম্পট দেন লাস্তিগ। দুই
ব্যবসায়ীর কেও আর পরে
লজ্জায় পুলিসের কাছে
অভিযোগ করতে যায়নি।
আমেরিকান কন আর্টিস্টদের
ভিতরে সম্ভবত সব চেয়ে
বেশী বিখ্যাত জর্জ সি
পার্কার। তার জন্ম ১৮৭০
সালে। তিনি বিক্রি করতেন
নিউইয়র্ক এর বিভিন্ন স্তাপনা।
তবে সবচেয়ে বেশী বিক্রি
করেছেন ব্রুকলিন ব্রিজ। আর
তার প্রিয় শিকার ছিল সেই
সময় আমেরিকায় নতুন আসা
অভিবাসীরা। তার
ক্রেতারা ব্রুকলিন ব্রিজে
টোল তোলার জন্য প্রায়
ব্যারিকেড দিতেন। পুলিস
আসার পর তারা বুজতে
পারতেন একজন কন আর্টিস্ট এর
শিকারে পরিনত হয়েছেন
তারা।
শেষ যার নামটি বলবো তিনি
হচ্ছেন মিথিলেশ কুমার
শ্রীবাস্তব যার জন্ম আমাদের
পাশের দেশ ভারতে। কন
আর্টিস্টদের মাঝে এই
লোককে একজন লিজেন্ড
হিসেবে মানা হয়। তিনি
সবচেয়ে বেশী পরিচিত
“নাটওয়ারলাল” নামে। এই
লোক তার পুরো জীবনে
বিক্রি করেছেন তাজ মহল,
লাল কেল্লা, রাষ্ট্রপতি ভবন,
এমন কি ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট
ভবন। সোজা কথায় ইন্দিয়ার
ঐতিহাসিক এবং সরকারি
গুরুত্বপূর্ণ স্তাপনা গুলো তিনি
বিক্রি করেছেন এমন কিছু
বিদেশীর কাছে যারা
ইন্ডিয়া সম্পরকে কিছুই
জানতো না। তাদের
অজ্ঞানতার সুযোগ নিতে ও
দেরি করেন নি এই কন
আর্টিস্ট। চিন্তা করুন এক
বিদেশী কোটিপতি লাখ
লাখ ডলার খরচ করে যখন
ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট কিনে
নিজের বাসা মনে করে
খুশিতে বাক বাকুম হয়ে
ভিতরে ঢুকতে যাবে তখন কি
হবে!

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »

Recent Posts